শিশুর জ্বর হলে কী করবেন-রইলো ঘরোয়া উপায়

 শিশুর জ্বর নিয়ে চিন্তা করেনি এমন মা অথবা অভিভাবক পাওয়া ভার হবে । বর্তমান সময় আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে যা শিশুর বিভিন্ন রোগ ব্যাধির সংক্রমনে  খুব সহায়ক। এরূপ আবহাওয়ায় ছোট বড় সবাই অসুস্থ হচ্ছেন দ্রুত। বিশেষ করে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে জ্বরে । সন্তানের জ্বর নিয়ে বাবা-মাকে পড়তে হচ্ছে বিপদে। 


জ্বর থেকে রেহাই পেতে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে খুব দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়। শিশুর গা যদি বেশ গরম থাকে, সন্তান যদি অস্বস্তিতে কান্না করে তাহলে এই ঘরোয়া উপায়গুলো মেনে চলতে পারেন । আবার শিশুর গায়ের তাপমাত্রা খুব বেশি যদি নাও হয় তাহলেও এই ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো মানলে শিশু অনেকটা বিপদ মুক্ত থাকবে বলে আশা করা যায়। তাই আসুন শিশুর জ্বর হলে কি করবেন এই ঘরোয়া উপায় গুলো জেনে নিই।

 তবে সচেতন থাকতে হবে তাপমাত্রা বেশি হলে অর্থাৎ তাপমাত্রা ১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা এর বেশি হলে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাপমাত্রা যদি না কমে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে । শরীরের র‌্যাশ বা এ জাতীয় কিছু দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

হালকা গরম পানিতে শিশুকে গোসল করানো

শিশুর জ্বর হলে জ্বর কমাতে শিশুকে হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করাতে পারেন। মনে রাখুন ঠান্ডা পানিতে নয়, কুসুম গরম পানি জ্বর কমাতে সহায়ক ।ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে তাপমাত্রা আরো বেড়ে যেতে পারে। অনেকেরই হয়তোবা এই অভিজ্ঞতা রয়েছে যে শিশুর জ্বর হওয়ার পরে ঠান্ডা পানিতে গোসল করাতে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। 

জ্বরের তাপমাত্রা বেশি থাকলে কুসুম গরম পানিতে পরিষ্কার কাপড় বা তোয়ালে ভিজিয়ে ভালো করে নিংড়ে নিন । এরপর তা দিয়ে শিশুর পুরো শরীর মুছে দিন। এতে শিশু স্বস্তি পাবে এবং আরাম পাবে।

বেশি করে তরল বা স্যুপ জাতীয় খাবার খেতে দিন

জ্বর হলে শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। কেননা জ্বর হলে শিশুর শরীর থেকে দ্রুত তরল পদার্থ কমতে থাকে। বিশুদ্ধ পানি, ডাবের পানি, ফলের জুস, চিকেন স্টক, শরবত ইত্যাদি নিয়ম করে খাওয়ানো প্রয়োজনের। স্যুপও খাওয়াতে পারেন। তবে ভুল করেও চা কিংবা কফি সন্তানকে খাওয়াবেন না। এতেও ডিহাইড্রেশন তথা পানি শূন্যতা দেখা দিবে।

 তবে খুব অল্প লিকার দিয়ে তার সঙ্গে কিছু নং ও তেজপাতা দিয়ে পানি গরম করে হালকা করে চা দেওয়া যেতে পারে যা তাদের ঠুকঠাক কাশি বা গলা ব্যথা দুর করতে সাহায্য করবে। 

পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম নেওয়া

শিশুর জ্বর হলে স্বাভাবিকভাবেই তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই তাদের পর্যাপ্ত ঘুম বা শারীরিক বিশ্রাম প্রয়োজন। তবে কোন কোন শিশু অপেক্ষাকৃত অনেক শক্ত থাকে যারা জ্বর হলেও দুর্বলতা অনুভব করে না। যাহোক শিশুর জ্বর হলে তার পূর্ণ বিশ্রামের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। সঠিক বিশ্রাম শিশুকে জ্বর থেকে খুব দ্রুত সুস্থ হতে সহায়তা করে।

ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করা

শিশুর জ্বর হলে তার  শরীরে পর্যাপ্ত বাতাস লাগানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।প্রয়োজনে ফ্যান চালু রাখতে হবে অথবা ঘরের দরজা জানালাগুলো খোলা রাখতে হবে যাতে করে তার গায়ে বাতাস লাগতে পারে এবং তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত বাতাসের কারণে ঠান্ডা না লাগে। 

মশারি টানিয়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করা

শিশুর জ্বর হলে তার শারীরিক দুর্বলতা থেকে যায়। এ সময়ে যদি মশা বা অন্যান্য কীট পতঙ্গ তাকে কামড় দেয় তাহলে দুর্বলতা আরো বেশি বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও অসুস্থ শিশুর গায়ে মশা পড়ে অন্য কাউকে যদি সে মশাই কামড় দেয় তাহলে তারও সেই রোগে সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ থেকে যায়।

 তাই তাই জ্বর অবস্থায় শিশুকে অন্য কোন রোগে যেন আক্রমণ করতে না পারে এবং শিশুর অসুস্থতা থেকে অন্য কেউ যেন সংক্রমিত না হতে পারে সেজন্য মশারি টাঙিয়ে নিয়ে ঘুমানো অত্যন্ত জরুরী। আমাদের সকলেরই সুস্থ হোক আর  অসুস্থ হোক সকল পর্যায়ে মশারি টানিয়ে ঘুমানো উচিত  ।

প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ ঘরে রাখা

প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ শিশুর জ্বর সাড়াতে বা  গায়ের তাপমাত্রা নামাতে সাহায্য করে । এটা প্রায় সকলেই আমরা জানি । তবে তা খাওয়ানোর ব্যাপারে বা সেবন করার ব্যাপারে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। শিশুর গায়ের তাপমাত্রা যদি ১০১ বা ১০২  এরকম হয়ে থাকে তাহলে তাকে নির্ধারিত পরিমাণে প্যারাসিটামল ওষুধ দুই থেকে তিনবার প্রতিদিন খাওয়ানো যেতে পারে।

 তবে এটা এক থেকে দুই বারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।  যদি দুই একবার খাওয়ানোর পরে তাপমাত্রা কমে যায় তবে পরবর্তীতে ডাক্তারের সাথেপরামর্শ করা উচিত।  এরপরেও যদি না ছাড়ে তাহলে খুব দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। 

শেষ কথা

প্রতিটি বাবা-মা তার শিশুকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তাই আমাদের শিশুদের প্রতি সবসময় তীক্ষ্ণ নজর রাখা উচিত। যাতে তারা কোনোভাবেই অসুস্থ হয়ে না পড়ে।  জ্বর  শিশুর একটি স্বাভাবিক অসুখ  বা রোগ যেটা খুব সহজেই ডাক্তারের পরামর্শ এবং কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে সাড়িয়ে তোলা যায়।  আমরা সকল শিশুর সুস্থতা কামনা করছি ।

 একটি সুস্থ সবল জাতি গঠনে  সুস্থ সবল শিশু গড়ে তুলতে হবে। সুস্থ সবল শিশু গড়ে তুলতে হলে অভিভাবক হিসেবে  আমাদেরকে সবসময় সচেতন থাকতে হবে।  আমাদের এই পোস্টটি পড়ে যদি কেউ সামান্যতম  উপকৃত হোন তাহলে আমরা সত্যিই  র্স্বাথক বলে মনে করবো এবং পরবর্তী পোস্ট লেখার জন্য এটা আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে ।

 আশা করি পোস্টটি ভালো লাগলে অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করবেন এবং আমাদেরকে নতুন নতুন পোস্ট লেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করবেন।  ধন্যবাদ সবাইকে। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url